ছবিঃ বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, ২ অক্টোবর২৪;
সালমান সিদ্দিক,রংপুর বিভাগীয় প্রধান
উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি নেই। কিছুদিন আগে তিস্তায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও মোটাদাগে বন্যা নয়। এটি স্বল্প মেয়াদের পানি বৃদ্ধির পরিস্থিতি। যাকে আমরা আবিধানিক ভাষায় 'ফ্ল্যাশ ফ্লাড' বলি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নদী পাড়ের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় এবং দ্রুত পানি নেমে যায়।
সেখানে কিছু পানিবন্দি পরিবারে ঐ দুই/তিনদিন রান্না হয়নি। কিন্তু তারা কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে কেউ বাজার থেকে শুকনা খাবার নিয়ে এসে খেয়েছেন। এখন সেই বাড়ি গুলো থেকে পানি নেমে গেছে। তিস্তার চরের কিছু বাড়িতে এখনও পানি রয়েছে। কিন্তু এখানে মজার ব্যাপার হলো, তারা এই পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে এবং সার্ভাইভ করার প্রস্তুতি নিয়েই চরে থাকেন। তাদের জন্য কিছু শুকনা খাবারের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু না দিলে যে তাদের খুব ক্ষতি হবেনা সেটা তিস্তার প্রতিটি বালুকণাই জানে।
বন্যা কাকে বলে সেটা গত জুলাই মাসের ব্রহ্মপুত্রের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। টানা কয়েক সপ্তাহ জুড়ে পানিবন্দি মানুষদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচার লড়াই, তার সাথে খাবারের যোগানের পদ্ধতি দেখে আপনারাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতেন। সেই সময় হাতে গোনা কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ও জেলা প্রশাসন ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের জন্য।
তিস্তার এই স্বল্পমেয়াদী বন্যা ইতোমধ্যে অস্তিত্বের সংকটে। কিন্তু আপনারা ত্রাণ(খাবারের প্যাকেট) নিয়ে এসে বন্যাকে ফেসবুকে দীর্ঘমেয়াদী করার যে চেষ্টা করছেন, সেই উদ্যোগের জন্য 'দ্যাখেন, আপনারা যা ভালো মনে করেন' ছাড়া আর কিছু বলার নাই।
তাহলে কি করা যেতে পারে...?
কুড়িগ্রামের নদী ভাঙ্গন নিয়ে আমাদের কারোরই মাথাব্যথা থাকেনা। কারন বাড়ি ডুবে যাওয়ার মতো পানি থাকেনা। ত্রাণ দেয়ার ভালো ছবি তোলা যায়না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘুরে বেড়ানোর মতো লোকেশন পাওয়া যায়না। এজন্য আমরা বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড? হিহি...!
যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তাদের উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি ত্রাণের টাকা দিয়ে নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো হলে সেটা হবে কার্যকর একটা পদক্ষেপ। কুড়িগ্রামের তিস্তায় আপনাদের শুকনা খাবার না পৌঁছালেও কেউ আপনাদের অপেক্ষায় থাকবেনা। কিন্তু ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কিছু না থাকা ঐ পরিবারটির কাছে এই লাইনটি মিথ্যা প্রমানিত হবে যে....'প্রত্যেকে মোরা পরের তরে'।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ধরলা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ৩ দিনে ৫০ টিরও বেশি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ইউনিয়নের একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক ও একমাত্র উচ্চবিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র সহ নদী পাড়ের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
অবশ্য এই কাজে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে! যেমন, একসাথে অনেকগুলো ত্রাণের প্যাকেটের ছবি তোলা যায়না, সহায়তা দেয়া পরিবারের সংখ্যা গুলোও সীমিত থাকে, টিমের সাথে একসাথে বেশি লোকজন আসারও সু্যোগ থাকেনা ইত্যাদি....!
যাইহোক, এক্ষেত্রে অবশ্য 'আপনারা যা ভালো মনে করেন' বলার সুযোগ হচ্ছেনা। অপচয় করে অসহায়দের নিয়ে 'সিম্প্যাথি বিজনেস' করবেন না।
বেগমগন্জ জনসাধারনের আকুতি,